রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫৭ পূর্বাহ্ন

চাপের মুখে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার

চাপের মুখে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রভাবে অস্বাভাবিক হারে কমছে রফতানি আয়। সেই সাথে কমে যাচ্ছে রেমিট্যান্স-প্রবাহ। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সামনে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ আস্বাভাবিক হারে কমে যাবে। এ পরিস্থিতিতে চাপে পড়ে যাবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিশেষ করে বৈদেশিক বাণিজ্যে কিছুটা স্থবিরতার কারণে বর্তমানে সম্ভাব্য পরিস্থিতি তেমনটা আঁচ করা যাচ্ছে না। কিন্তু যেভাবে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে ডলারের সরবরাহ কমে যাচ্ছে, তাতে সামনে ভয়াবহ সঙ্কট দেখা দিতে পারে। ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোর তাদের নিজস্ব মজুদ এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে যেটুকু আসছে তাই দিয়ে চাহিদা মেটানো হচ্ছে। আর যেসব ব্যাংকের মজুদ ফুরিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তায় তারা বিকল্প ব্যবস্থায় বৈদেশিক বাণিজ্যের দায় মেটাচ্ছে। কিন্তু সামনে এ সঙ্কট সব শ্রেণীর ব্যাংকেরই আসতে পারে, যার ভয়াবহ প্রভাব পড়বে পুরো অর্থনীতিতে।

দেশের রফতানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশের ওপরে আবদান রাখছে তৈরী পোশাক খাত। আর এ তৈরী পোশাকের প্রায় ৭০ ভাগ রফতানি হয় ইউরোপীয় পাঁচটি দেশে। এর মধ্যে ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ফলে এসব দেশ তাদের বাজার সঙ্কুচিত করে ফেলেছে।

অপর দিকে আমাদের রেমিট্যান্সের দুই তৃতীয়াংশ বাজার হলো মধ্যপ্রাচ্য। সেই মধ্যপ্রাচ্যও করোনাভাইরাসের কারণে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। শ্রমিকরা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। অনেক বিদেশী কোম্পানি ঘরে বসিয়েই শ্রমিকদের শুধু খাবারের জোগান দিচ্ছে। এতে বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের আয় প্রায় বন্ধ। অপর দিকে ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ যেসব দেশে প্রবাসী শ্রমিকরা অবৈধভাবে কাজ করছেন তাদের অবস্থা আরো শোচনীয় অবস্থায়। সংশ্লিষ্টদের মতে, একমাত্র ইতালিতেই এমন অবৈধ শ্রমিক রয়েছেন প্রায় এক লাখ। আর তাদের বেশির ভাগই চুক্তি ভিত্তিতে কাজ করেন। করোনায় কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রেমিট্যান্স-প্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। সামনে এ পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকারে দেখা দিতে পারে।

বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহের অন্য এ দুই মাধ্যম তথা রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স-প্রবাহে বড় ধরনের ধাক্কা লাগায় সামনে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ আশঙ্কাজনক হারে কমে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

এ বিষয়ে দেশের দ্বিতীয় প্রজন্মের একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক গতকাল বুধবার নয়া দিগন্তকে জানান, বর্তমানে সীমিত পর্যায়ে ব্যাংকিংয়েই তারা হিমশিম খাচ্ছেন। নিজেদের কাছে যেটুকু মজুদ ছিল এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে ছিটেফোঁটা যেটুকু আসছে তাই দিয়ে কোনো মতে, সামাল দেয়া হচ্ছে। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতি উন্নতি হলে আমাদের ব্যাপক ভিত্তিতে চাহিদা বেড়ে যাবে। কিন্তু যে হারে চাহিদা বেড়ে যাবে সেই হারে সরবরাহ বাড়বে না। এমনিতেই বর্তমানে সঙ্কট, ওই সময়ে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট ভয়াবহ আকারে দেখা দিতে পারে। এ সময়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা কী হবে তার ওপর নির্ভর করবে বাজার পরিস্থিতি। কারণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে জোগান না দিলে সম্ভাব্য পরিস্থিতি সামাল দেয়া কষ্টকর হয়ে পড়বে। তবে, রিজার্ভের মজুদও তখন কতটুকু থাকে তার ওপর নির্ভর করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা। তবে, সে যাই হোক বৈদেশিক মুদ্রাবাজার যে বড় ধরনের চাপে পড়ে যাচ্ছে তা অনেকটা দিবালোকের সত্য বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877